Who gave Kazi Nazrul Islam the title of rebel poet
কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি উপাধি দেন কে ? কাজী নজরুল ইসলামকে “বিদ্রোহী কবি” উপাধি দেওয়ার ব্যাপারে দুটি ভিন্ন মতবাদ প্রচলিত। চলুন আজকে জেনে নি সেই কারন গুলো কি এছাড়াও কাজী নজরুল এর বিষয়ে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আজকে আমরা জানবো চলুন শেষ পর্যন্ত পড়ি।
প্রথম মতবাদ:
অনেকের মতে, কাজী নজরুল ইসলামকে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত “বিদ্রোহী কবি” উপাধি দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় মতবাদ:
অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন কবি মোহাম্মদ মকসুদ নজরুলকে এই উপাধি দিয়েছিলেন।
উভয় মতবাদেরই পক্ষে যুক্তি রয়েছে:
প্রথম মতবাদের পক্ষে যুক্তি:
- ১৯২৯ সালে কলকাতার আলহামরা থিয়েটারে অনুষ্ঠিত এক সাহিত্য সভায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত নজরুলকে “বিদ্রোহী কবি” বলে সম্বোধন করেছিলেন বলে জানা যায়।
- ঐ সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রে এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
- সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন সম্মানিত সাহিত্যিক এবং সমালোচক, তাই তাঁর এই বক্তব্যটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়।
দ্বিতীয় মতবাদের পক্ষে যুক্তি:
- মোহাম্মদ মকসুদ ছিলেন নজরুলের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী।
- তিনি নজরুলের বিপ্লবী কবিতাগুলির প্রশংসা করেছিলেন এবং তাঁকে “বিদ্রোহী কবি” বলে অভিহিত করেছিলেন।
- মকসুদ ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, তাই তাঁর এই বক্তব্যটিও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
উপসংহার:
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রথম কাজী নজরুল ইসলামকে “বিদ্রোহী কবি” উপাধি দিয়েছিলেন তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। তবে, দু’জন ব্যক্তিত্বই এই উপাধি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- নজরুলের কবিতা ও গানগুলি তাঁর বিদ্রোহী চেতনার জন্য বিখ্যাত।
- তিনি ব্রিটিশ শাসন, সামাজিক অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
- তাঁর সাহিত্যকর্ম বাঙালি সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিপ্লব এনেছিল।
কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম ও শৈশব:
- কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
- পিতা কাজী ফকির আহমেদ ছিলেন একজন মুসলমান ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি, এবং মাতা জাহেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী।
- নজরুলের ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীত ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ছিল।
- মাত্র নয় বছর বয়সে পিতৃহারা হন এবং দারিদ্র্যের কবলে পড়েন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
- নজরুলের শিক্ষাজীবন ছিল ব্যাহত।
- তিনি বিভিন্ন স্কুলে অধ্যয়ন করেন এবং কিছুকাল মক্তবে শিক্ষকতাও করেন।
- ১৯১৪ সালে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের জন্য ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন।
- সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি কবিতা ও গান লিখতে শুরু করেন।
- ১৯১৯ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং কলকাতায় চলে আসেন।
- কলকাতায় তিনি সাংবাদিকতা, সাহিত্যচর্চা ও রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
সাহিত্যকর্ম:
- কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের একজন Lord Byron.
- তিনি কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী সহ বিভিন্ন ধরণের সাহিত্য রচনা করেছেন।
- তাঁর বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে রয়েছে “বিদ্রোহী”, “চল চল চল”, “কারাগার”, “নজরুলগীতি”।
- তাঁর বিখ্যাত গানগুলির মধ্যে রয়েছে “ধন্য ধন্য বাংলা”, “নবীন বাংলাদেশ”, “চল বাংলার মুখ”, “কাঁদি রে কাঁদি রে”।
- তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে “বিদ্রোহী”, “মৃত্যুক্ষুধা”, “কুহেলিকা”।
সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড:
- কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক ও রাজনৈতিক কর্মী।
- তিনি ব্রিটিশ শাসন, সামাজিক অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
- তিনি খিলাফত ও অসহযোগিতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
- তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
উপাধি ও সম্মাননা:
- “বিদ্রোহী কবি” উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামকে।
- তিনি “সাহিত্য সম্রাট”, “বিদ্রোহী কবি”, “কবিগুরু” ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতির নাম কি
কাজী নজরুল ইসলাম বিখ্যাত কবিতা
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল। তাঁর অসংখ্য বিখ্যাত কবিতা রয়েছে, তবে তার মধ্যে কয়েকটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় ও সমাদৃত:
বিদ্রোহী:
- এটি নজরুলের সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে একটি, যা তাঁর বিদ্রোহী চেতনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
- এই কবিতায় কবি সামাজিক অনাচার, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
চল চল চল:
- এটি একটি উৎসাহব্যঞ্জক কবিতা যা বাঙালিদের ঐক্য ও সংগ্রামের আহ্বান জানায়।
- এই কবিতাটি প্রায়শই বিভিন্ন সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গাওয়া হয়।
কারাগার:
- এই কবিতায় কবি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের দ্বারা কারাগারে আটক থাকাকালীন তাঁর অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছেন।
- কবিতাটিতে স্বাধীনতা ও বিদ্রোহের বার্তাও স্পষ্ট।
নজরুলগীতি:
- নজরুলগীতি হল নজরুল রচিত সঙ্গীতবদ্ধ কবিতাগুলির একটি সংকলন।
- এই গানগুলি তাদের সুর, কথা ও বিষয়বস্তুর জন্য বিখ্যাত।
- নজরুলগীতি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
অন্যান্য বিখ্যাত কবিতা:
- কবিতা
- বন্দী বিদ্রোহী
- মৃত্যুক্ষুধা
- চল বাংলার মুখ
- দুর্গম গিরি কাননে
- হে মুক্তা মালা
এছাড়াও, নজরুল আরও অনেক বিখ্যাত কবিতা রচনা করেছেন। তাঁর কবিতাগুলি তাদের শক্তিশালী ভাষা, স্পষ্ট বার্তা ও আবেগের জন্য বিখ্যাত।
কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
সাহিত্য ও সংস্কৃতি:
- “সাহিত্য হলো মানুষের মনের আয়না।”
- “গান মানুষের প্রাণের খাদ্য।”
- “কবিতা হলো আত্মার উদ্গীরণ।”
- “সংস্কৃতি হলো জাতির চরিত্র।”
- “ভাষা হলো জ্ঞানের চাবিকাঠি।”
স্বাধীনতা ও বিদ্রোহ:
- “স্বাধীনতা ছাড়া জীবন মূল্যহীন।”
- “যে ভয় পায় সে পরাজিত।”
- “অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমাদের কর্তব্য।”
- “সাহসীরা জয়ী হয়।”
- “জীবনে লড়াই করতে হবে।”
মানবতা ও সমাজ:
- “মানুষ সকলেই সমান।”
- “ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।”
- “দারিদ্র্য ও অসমতা দূর করা উচিত।”
- “সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা উচিত।”
- “পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।”
জীবন ও দর্শন:
- “জীবন এক সংগ্রাম।”
- “কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।”
- “আশাবাদী হওয়া উচিত।”
- “নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।”
- “জীবনে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হওয়া উচিত।”
কিছু বিখ্যাত উক্তি:
- “আমি কবিতা লিখি না, আমি গান গাই। আমার কবিতা গানের মতো সুরে বেজে ওঠে।”
- “আমি বিদ্রোহী, কারণ আমি সত্যকে ভালোবাসি।”
- “স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার।”
- “ভয় পেয়ে কেউ যদি বাঁচে, সে জীবন নয়, মৃত্যু।”
- “মানুষের মনে যদি বিশ্বাস থাকে, তাহলে অসম্ভবও সম্ভব করা যায়।”
- “চেষ্টা করে যাও, থামো না। হার মানলেই হেরে যাবে।”
- “সাহসের অভাবেই মানুষের পতনের সূচনা।”
- “শিক্ষাই জাতির মুক্তির মূল চাবিকাঠি।”
- “ধর্ম যদি মানুষকে বিভক্ত করে, তবে সে ধর্ম বাতিল।”
- “সমাজের সকলের প্রতি সহানুভূতি ও সম্মান আমাদের কর্তব্য।”
উল্লেখ্য যে, কাজী নজরুল ইসলাম অসংখ্য উক্তি ও বক্তৃতা দিয়েছেন। উপরে উল্লেখিত উক্তিগুলি তার বিখ্যাত কিছু উক্তির একটি সংক্ষিপ্তসার।
আরও পড়ুনঃ আধুনিক ইতিহাসের জনক কে
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ প্রায় ২৩ টি , আবার “মৃত্যুক্ষুধা” কাব্যগ্রন্থটিকে কেউ কেউ কবিতা ও গানের সংকলন হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
কিছু বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম:
- বিদ্রোহী (১৯২১)
- যাদুবাঁশি (১৯২২)
- নজরুলগীতি (১৯২৩)
- চল চল চল (১৯২৪)
- কারাগার (১৯২৬)
- মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩০)
- দুর্গম গিরি কাননে (১৯৩২)
- চল বাংলার মুখ (১৯৩৯)
- কাঁদি রে কাঁদি রে (১৯৪২)
- মহাশ্মশান (১৯৬১)
কাজী নজরুল ইসলামের ছদ্মনাম কি?
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব, যিনি কবিতা, গান, সাহিত্য, সঙ্গীত, নাট্যকলা, রাজনীতি, সমাজ সংস্কার সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। তিনি তার জীবদ্দশায় অনেক ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
তার কিছু বিখ্যাত ছদ্মনাম:
- ধূমকেতু: এটি ছিল তার সবচেয়ে বিখ্যাত ছদ্মনাম, যা তিনি ১৯২২ সালে “ধূমকেতু” নামক সাহিত্য পত্রিকা প্রতিষ্ঠার সময় ব্যবহার শুরু করেছিলেন।
- নুরু: এটি ছিল তার কৈশোরকালীন ছদ্মনাম, যা তিনি “নুরু” নামক একটি ছোটগল্পে ব্যবহার করেছিলেন।
- নরু: এটিও তার কৈশোরকালীন আরেকটি ছদ্মনাম।
- তারাক্ষাপা: এটি ছিল তার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি ছদ্মনাম।
- নজরুল এছলাম: এটি ছিল তার আরেকটি পরিচিত ছদ্মনাম।
- মোহম্মদ লোক হাসান: এটি ছিল তার মুসলিম পরিচয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যবহৃত একটি ছদ্মনাম।
- বাগনান: এটি ছিল তার জন্মস্থান বাগনান গ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যবহৃত একটি ছদ্মনাম।
- কহ্লন মিশ্র: এটি ছিল তার হিন্দু ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যবহৃত একটি ছদ্মনাম।
এছাড়াও, আরও অনেক ছদ্মনাম রয়েছে যা তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করেছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম ছদ্মনাম ব্যবহার করার কারণ:
- সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য।
- বিভিন্ন ধরণের সাহিত্য রচনা করার জন্য।
- বিভিন্ন চরিত্র ও ভাব প্রকাশ করার জন্য।
- ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য।
উপসংহার:
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন অনন্য প্রতিভা, যিনি তার বহুমুখী প্রতিভা ও সাহসী মনোভাবের জন্য পরিচিত। ছদ্মনাম ব্যবহার ছিল তার ব্যক্তিত্বের আরেকটি দিক, যা তার সাহিত্যকর্ম ও জীবনকে আরও রহস্যময় ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
Pingback: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি | এবং এর আয়তন জেনে নিন