You are currently viewing বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কয়টি | ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কি
বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কয়টি

বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কয়টি | ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কি

What are the main principles of the constitution of Bangladesh? 

বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কয়টি ? বাংলাদেশের সংবিধানে মোট চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই মূলনীতিগুলি হল:

  1. জাতীয়তাবাদ: বাংলাদেশের জনগণের ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
  2. গণতন্ত্র: জনগণের ইচ্ছা অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করা।
  3. ধর্মনিরপেক্ষতা: সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীলতা ও রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না দেখানো।
  4. সমাজতন্ত্র: শোষণমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

এই মূলনীতিগুলি সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ড এই মূলনীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।

উল্লেখ্য যে, সংবিধানের ৮ম অনুচ্ছেদে এই চারটি মূলনীতি ছাড়াও আরও কিছু নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন:

  • আইনের শাসন: সকলের জন্য আইনের সমতার নীতি প্রতিষ্ঠা করা।
  • মৌলিক মানবাধিকার: সকল নাগরিকের জন্য মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা।
  • সামাজিক ন্যায়বিচার: সকলের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা করা।
  • শ্রমিকদের অধিকার: শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা।
  • কৃষকদের অধিকার: কৃষকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা।
  • মহিলাদের অধিকার: মহিলাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা।
  • পরিবেশ রক্ষা: পরিবেশ রক্ষা করা।

এই নীতিগুলিও রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে বিবেচিত ।

বাংলাদেশের সংবিধান কতবার সংশোধন করা হয়েছে?

বাংলাদেশের সংবিধান এ পর্যন্ত সংশোধন করা হয়েছে ১৭ বার।

সর্বশেষ সংশোধনী হল ১৭তম সংশোধনী যা ২০২৩ সালের ৮ই মার্চ জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় এবং ১০ই মার্চ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১৫৪ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়েছে।

সংবিধানের সংশোধনীগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে করা হয়েছে। যেমন:

  • রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন: ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তনের জন্য প্রথম সংশোধনী করা হয়।
  • সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন: ১৯৮৬ সালের সামরিক শাসন বিলুপ্তির পর ষষ্ঠ সংশোধনী করা হয়, যার মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  • নতুন নীতি প্রণয়ন: বিভিন্ন নতুন নীতি প্রণয়নের জন্যও সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়েছে। যেমন, ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  • বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন: বিদ্যমান বিধানে পরিবর্তন আনার জন্যও সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। যেমন, ১২তম সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধানে পরিবর্তন আনা হয়।

সংবিধান সংশোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এটি শুধুমাত্র জরুরি ক্ষেত্রেই করা উচিত। সংবিধানের মূলনীতি ও গঠন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

জাতীয় সংবিধান দিবস কবে

জাতীয় সংবিধান দিবস কবে?

জাতীয় সংবিধান দিবস প্রতি বছর ৪ঠা নভেম্বর পালিত হয়।

১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান গণপরিষদে গ্রহণ করা হয়। সেই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি বছর এই দিনটি জাতীয় সংবিধান দিবস হিসেবে পালিত হয়।

এই দিনে সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বাণী দেন। আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সংবিধান পাঠ, পুরস্কার বিতরণ, মুক্তিযুদ্ধের স্মরিকায় শ্রদ্ধাঞ্জলি, রাষ্ট্রীয় পতাকা উত্তোলন, সংবিধানের মূলনীতি ও তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

২০২৩ সালের ৪ঠা নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের ৫২তম জাতীয় সংবিধান দিবস।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের বিভাগ কয়টি ও কি কি

সরকার ব্যবস্থা কি ?

সরকার ব্যবস্থা:

সরকার ব্যবস্থা বলতে বোঝায় কোনো দেশের শাসন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং দেশ পরিচালনা করে। এটি আইন প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ, জনসেবা প্রদান, এবং দেশের বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সম্পাদন করে।

বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা:

বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতন্ত্র, যেখানে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান।

সরকারের প্রধান অঙ্গগুলি:

  • জাতীয় সংসদ: এটি দেশের সর্বোচ্চ আইনসভা, যেখানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বসেন। জাতীয় সংসদের মূল কাজ হল আইন প্রণয়ন, সরকারের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করা এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়া।
  • নির্বাহী শাখা: এই শাখা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সমন্বয়ে গঠিত। নির্বাহী শাখার দায়িত্ব হল আইন বাস্তবায়ন করা, দেশ পরিচালনা করা এবং জনগণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা।
  • বিচার বিভাগ: এই বিভাগ স্বাধীন এবং এর দায়িত্ব হল আইনের ব্যাখ্যা করা এবং বিচার প্রদান করা।

স্থানীয় সরকার:

বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা তিন স্তরে বিভক্ত:

  • ইউনিয়ন পরিষদ: এটি গ্রামাঞ্চলের সর্বনিম্ন স্তরের সরকার।
  • উপজেলা পরিষদ: এটি উপজেলা স্তরের সরকার।
  • জেলা পরিষদ: এটি জেলা স্তরের সরকার।

সরকারের কাজ:

  • আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: সরকারের মূল কাজগুলির মধ্যে একটি হল আইন প্রণয়ন করা এবং সেগুলি বাস্তবায়ন করা।
  • শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা: সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করা।
  • অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ: সরকার দেশের অর্থনীতির দিক নির্দেশনা দেয় এবং অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করে।
  • জনসেবা প্রদান: সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ইত্যাদি বিভিন্ন জনসেবা প্রদান করে।
  • বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনা: সরকার অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং রক্ষা করে।

সরকার ব্যবস্থা একটি দেশের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্রের নীতির উপর নির্ভরশীল।

সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ?

সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন:

বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। এটি রাষ্ট্রের কাঠামো, সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং কর্তব্য নির্ধারণ করে। সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিম্নরূপ:

আইন প্রণয়ন:

  • জাতীয় সংসদ: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদই আইন প্রণয়নের একমাত্র কর্তৃপক্ষ। সংবিধানের ধারা 60 অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ যেকোনো বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।
  • আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া: একটি আইন প্রণয়নের জন্য, প্রথমে জাতীয় সংসদের একজন সদস্য একটি বিল প্রস্তাব করেন। বিলটি যদি সংসদের স্পিকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়, তাহলে তা সংসদে পেশ করা হয়। বিলটি তিনটি পাঠ্য পর্যায়ে আলোচিত হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হলে তা আইনে পরিণত হয়।
  • সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য: প্রণীত সকল আইন অবশ্যই সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। যদি কোন আইন সংবিধানের সাথে বৈপরীত্যপূর্ণ হয়, তাহলে তা উচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিল করা যেতে পারে।

আইন বাস্তবায়ন:

  • নির্বাহী শাখা: আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাহী শাখার, যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা।
  • আইন প্রয়োগকারী সংস্থা: আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যেমন পুলিশ, আইন বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী শাখার সহায়তা করে।
  • বিচার বিভাগ: বিচার বিভাগ আইনের ব্যাখ্যা করে এবং আইন লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি প্রদান করে।

সংবিধানের ভূমিকা:

  • আইনের শাসন: সংবিধান আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে, যার অর্থ আইন সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
  • নাগরিকদের অধিকার রক্ষা: সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।
  • সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে: সংবিধান সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে এবং নিশ্চিত করে যে সরকার জনগণের প্রতি জবাবদিহি করে।

সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা নিশ্চিত করে যে সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে, নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করে এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহি করে।

আরও পড়ুনঃ মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠাতা কে | WHO IS THE FOUNDER OF MICROSOFT

সংবিধানের আলোকে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা?

বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো প্রদান করে। সংবিধানের অধীনে নাগরিকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার নিম্নরূপ:

সমতা ও ন্যায়বিচারের অধিকার:

  • আইনের দৃষ্টিতে সর্বস্তরের জনগণ সমান এবং আইনের সমান সুযোগ সুবিধা ভোগের অধিকারী।
  • আইনের প্রয়োগে কোন বৈষম্য করা যাবে না।
  • সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে।

জীবনের অধিকার:

  • সকল নাগরিকের জীবনের অধিকার রয়েছে এবং আইনের দ্বারা তা রক্ষা করা হবে।
  • কাউকে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া জীবনবঞ্চিত করা যাবে না।

স্বাধীনতার অধিকার:

  • ব্যক্তি স্বাধীনতা, চিন্তাভাবনার স্বাধীনতা, বিশ্বাসের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, পেশার স্বাধীনতা, এবং চলাফেরার স্বাধীনতার অধিকারী।
  • অভিব্যক্তির স্বাধীনতা সাপেক্ষে কিছু সীমাবদ্ধতার अधीन।

ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার:

  • সকল নাগরিকের নিজ নিজ ধর্মাবলম্বন, পালন ও প্রচারের স্বাধীনতা রয়েছে।
  • রাষ্ট্র কোন ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে না।

শোষণমুক্তির অধিকার:

  • সকল নাগরিকের শোষণমুক্তির অধিকার রয়েছে।
  • মানবপাচার, বেদমর্দন, এবং শিশুশ্রম নিষিদ্ধ।

শিক্ষার অধিকার:

  • সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার রয়েছে।
  • রাষ্ট্র শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

কাজের অধিকার:

  • সকল নাগরিকের কাজের অধিকার রয়েছে।
  • রাষ্ট্র কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

মালিকানার অধিকার:

  • সকল নাগরিকের সম্পত্তির অধিকার রয়েছে।
  • আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া কারও সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো প্রদান করে। রাষ্ট্রের কর্তব্য হল এই অধিকারগুলি রক্ষা করা এবং নিশ্চিত করা যাতে সকল নাগরিক আইনের শাসনের অধীনে বসবাস করতে পারে।

উপসংহার:

আজকে আমরা জানতে পারলাম যে, জাতীয় সংবিধান দিবস কবে, বাংলাদেশের সংবিধান কতবার সংশোধন করা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কি, আশা করি আজকের আর্টিকেল এঁর মাধ্যমে অনেক সংবিধান বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।

This Post Has One Comment

Leave a Reply