আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় | জেনে নিই

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়, হল সাধারণত দুটি বিষয় লক্ষ্য করা হয়:

১) শিশুর জননাঙ্গ:

  • ছেলে: আলট্রাসাউন্ডে যদি শিশুর লিঙ্গের সাথে ছোট্ট লিঙ্গ এবং অন্ডকোষ দেখা যায়, তাহলে সন্তানটি ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • মেয়ে: মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে লেবিয়া এবং ভ্যাজাইনা দেখা যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে, মেয়ে শিশুর যৌনাঙ্গ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নাও হতে পারে।

২) Nuchal Translucency (NT):

  • ছেলে: গবেষণায় দেখা গেছে যে ছেলে শিশুদের মেয়ে শিশুদের তুলনায় NT একটু বেশি হতে পারে। তবে, এটি নিশ্চিত নয় এবং NT মাত্র একটি সম্ভাব্য নির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখবেন:

  • আলট্রাসাউন্ড শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য একটি খুবই নির্ভুল পদ্ধতি, তবে ১০০% নিশ্চিত নয়।
  • কিছু ক্ষেত্রে, শিশুর অবস্থান, অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ, এবং আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রের মানের কারণে লিঙ্গ স্পষ্টভাবে দেখা নাও যেতে পারে।
  • বেশিরভাগ দেশেই গর্ভাবস্থার লিঙ্গ নির্ধারণ করার আগে নির্দিষ্ট সপ্তাহ অতিক্রম করতে হয়। বাংলাদেশে গর্ভাবস্থার ১৮ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে লিঙ্গ নির্ধারণ করা আইনিভাবে নিষিদ্ধ।
  • শিশুর স্বাস্থ্য এবং विकास সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। লিঙ্গ জানার চেয়ে আপনার গর্ভাবস্থার নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার আলট্রাসাউন্ড রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে আপনার শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারবেন এমন একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তার বা প্রসূতি বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় কতবার আল্ট্রা করা উচিত
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়

গর্ভাবস্থায় কতবার আল্ট্রা করা উচিত?

সাধারণত, গর্ভাবস্থায় তিনবার আল্ট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই তিনটি আল্ট্রাসাউন্ড হল:

  • প্রথম আল্ট্রাসাউন্ড: গর্ভাবস্থার ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। এই আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে গর্ভাবস্থার নিশ্চয়তা করা হয়, যমজ শিশু আছে কিনা তা দেখা হয়, এবং গর্ভাবস্থার সঠিক সময় নির্ধারণ করা যায়।
  • দ্বিতীয় আল্ট্রাসাউন্ড: গর্ভাবস্থার ১৮-২০ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। এই আল্ট্রাসাউন্ডকে “অ্যানোমালি স্ক্যান” ও বলা হয়। এই আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা দেখা হয়, এবং কোন ধরনের জন্মগত ত্রুটি আছে কিনা তা শনাক্ত করা যায়।
  • তৃতীয় আল্ট্রাসাউন্ড: গর্ভাবস্থার ৩২-৩৪ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। এই আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুর অবস্থান (মাথার দিকে কিনা পা দিকে), অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ, এবং শিশুর আনুমানিক ওজন নির্ধারণ করা যায়।

কিছু ক্ষেত্রে, আরও বেশি আল্ট্রাসাউন্ড করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন:

  • উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা: যদি মায়ের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হয়, যদি তিনি মধুমেহ বা উচ্চ রক্তচাপের মতো কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন, অথবা যদি তিনি পূর্বে সি-সেকশন করিয়ে থাকেন তবে আরও বেশি আল্ট্রাসাউন্ড করার প্রয়োজন হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় জটিলতা: যদি গর্ভাবস্থায় রক্তপাত, পানি ভেঙে যাওয়া, বা শিশুর বৃদ্ধি হয় তবে আরও বেশি আল্ট্রাসাউন্ড করার প্রয়োজন হতে পারে।

আপনার গর্ভাবস্থায় কতবার আল্ট্রাসাউন্ড করার প্রয়োজন হবে তা নির্ধারণ করবেন আপনার ডাক্তার। তিনি আপনার স্বাস্থ্য এবং গর্ভাবস্থার অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। মনে রাখবেন যে আল্ট্রাসাউন্ড একটি নিরাপদ এবং অ-আক্রমণাত্মক পরীক্ষা।

আরও পড়ুনঃ কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়

আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে কত টাকা লাগে?

আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে রয়েছে:

পরীক্ষার ধরণ:

  • বেসিক পেটের আল্ট্রাসাউন্ড: সবচেয়ে সাধারণ ধরণের আল্ট্রাসাউন্ড। এটি পেটের অঙ্গগুলি, যেমন লিভার, গলব্লাডার, কিডনি, মূত্রাশয়, প্লীহা এবং गर्भाशय পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। খরচ ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
  • ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড: এটি রক্ত ​​নালীগুলির রক্ত ​​প্রবাহ পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। গর্ভবতী মহিলাদের Doppler আল্ট্রাসাউন্ড করা হয় শিশুর বৃদ্ধি দেখার জন্য। এই ধরনের আল্ট্রাসাউন্ডের খরচ ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
  • একোকার্ডিওগ্রাম: এটি হৃদয় এবং তার ভাল্বগুলির একটি বিস্তারিত আল্ট্রাসাউন্ড। এই পরীক্ষার খরচ ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
  • ট্রান্সভেজিনাল আল্ট্রাসাউন্ড: এটি গর্ভাশয় এবং ডিম্বাশয় পরীক্ষা করার জন্য যোনির মাধ্যমে করা হয়। গর্ভাবস্থায় এটি নিয়মিত করা হয় এবং এর খরচ ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।

কোথায় পরীক্ষা করা হচ্ছে:

  • সরকারি হাসপাতাল: বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি হাসপাতালে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা সাধারণত কম খরচে করা হয়। সরকারি হাসপাতালে একটি বেসিক পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের খরচ ৫০০-৭০০ টাকা হতে পারে।
  • বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিক: বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার খরচ বেশি হতে পারে। একটি বেসিক পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের খরচ ১০০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ডাক্তারের অভিজ্ঞতা:

  • অভিজ্ঞ ডাক্তারদের ফি বেশি হতে পারে।

মেশিনের মান:

  • আধুনিক এবং উন্নত মানের মেশিন ব্যবহার করে করা আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার খরচ বেশি হতে পারে।

অতিরিক্ত সেবা:

  • কিছু ক্লিনিক রিপোর্টের প্রিন্টেড কপি, সিডি বা ডিভিডি প্রদানের জন্য অতিরিক্ত চার্জ নেয়।

মোটকথা, বাংলাদেশে আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার খরচ ৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

ছেলে হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়

ছেলে হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়?

গর্ভাবস্থায় ছেলে সন্তান হলে কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে বলে কিছু জন বিশ্বাস করেন। তবে, এই লক্ষণগুলির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং এগুলি কেবলমাত্র জনপ্রিয় বিশ্বাস বা কুসংস্কার কিছু সাধারণ লক্ষণ যা ছেলে সন্তান হওয়ার সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়:

  • গর্ভবতী মহিলার ত্বক তৈলাক্ত এবং ব্রণযুক্ত হয়।
  • মহিলার চুল রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়।
  • মহিলার পেটের ডান দিকে বেশি চাপ অনুভূত হয়।
  • মহিলার খাবারের প্রতি রুচি পরিবর্তিত হয়, বিশেষ করে ঝাল বা টক খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
  • মহিলার মেজাজ পরিবর্তনশীল থাকে এবং কিছুটা বিরক্তিকর মনে হয়।
  • মহিলার ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তিত হয়, বিশেষ করে রাতে বেশি ঘুম হয়।
  • মহিলার প্রস্রাবের গন্ধ তীব্র হয়।
  • গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে কিছুটা বমি বমি ভাব এবং বমি হয়।

মনে রাখবেন যে এই লক্ষণগুলি ছেলে সন্তান হওয়ার নিশ্চিত প্রমাণ নয়। প্রতিটি গর্ভাবস্থা আলাদা হয় এবং একজন মহিলার অভিজ্ঞতা অন্যের থেকে ভিন্ন হতে পারে। আপনার গর্ভাবস্থায় আপনার শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল আল্ট্রাসাউন্ড। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার ১৮-২০ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়।

আপনার গর্ভাবস্থা সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ডি যুক্ত শাকসবজি | ১০ টি উপকার জেনে নিন

আল্ট্রাসনোগ্রামের উৎপত্তি

আল্ট্রাসনোগ্রাম একটি অ-আক্রমণাত্মক ইমেজিং পদ্ধতি যা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে অঙ্গ ও টিস্যুর চিত্র তৈরি করে। আল্ট্রাসনোগ্রামের উৎপত্তি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে

  • ১৯২০ সালে, পিয়েরে এবং জ্যাক কিউরি প্রথম পিয়েজোইলেকট্রিক প্রভাব আবিষ্কার করেন। এই প্রভাবটি নির্দিষ্ট ধরণের উপকরণে যান্ত্রিক চাপ প্রয়োগ করলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
  • ১৯৪২ সালে, ডেভিড টার্নার একটি সোনার ডিভাইস তৈরি করেন যা জলজ খনিজ অনুসন্ধানে ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • ১৯৫০-এর দশকের প্রথম দিকে, ড. জোসেফ ফ্রেজার এবং ড. জন উইলিয়ামস মানুষের শরীরের অভ্যন্তরীণ চিত্র তৈরি করতে সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেন।
  • ১৯৫২ সালে, ড. ডি. এফ. ম্যাকডোনাল্ড প্রথম চিকিৎসাগত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে মস্তিষ্কের একটি টিউমার চিত্রায়িত করেন।
  • ১৯৬০-এর দশকে, আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হয় এবং গর্ভাবস্থায় শিশুর চিত্র তৈরি করতে ব্যবহার করা শুরু হয়।
  • ১৯৭০-এর দশকে, ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড বিকশিত হয়, যা রক্ত ​​নালীতে রক্ত ​​প্রবাহ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।
  • ১৯৮০-এর দশকে, 3D আল্ট্রাসাউন্ড বিকশিত হয়, যা আরও বাস্তবসম্মত চিত্র তৈরি করতে পারে।

আজকের দিনে, আল্ট্রাসাউন্ড চিকিৎসার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি বিভিন্ন ধরণের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি যারা আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদান রেখেছেন:

  • ড. জোসেফ ফ্রেজার
  • ড. জন উইলিয়ামস
  • ড. ডি. এফ. ম্যাকডোনাল্ড
  • ড. কার্ল হেলমুট ব্রুনার
  • ড. ফ্রান্সিস ফেই
  • ড. ডেভিড গ্রে

আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত চিত্র তৈরি করতে এবং আরও বেশি রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *