হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ ? হ্যাঁ, হেপাটাইটিস বি একটি ছোঁয়াচে রোগ। এটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা রক্ত, লালা, যোনি তরল এবং বীর্য সহ শরীরের বিভিন্ন তরল পদার্থের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হেপাটাইটিস বি কীভাবে ছড়ায়:
- রক্ত ও দেহ রসের সংস্পর্শে আসা:
- HBV আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা দেহ রসের সংস্পর্শে আসা, যেমন:
- সুঁচ বা ছুরি ভাগ করে নেওয়া: যদি আপনি HBV আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সুঁচ বা ছুরি ভাগ করে নেন, তাহলে আপনি সংক্রমিত হতে পারেন।
- যৌনতা: যৌন সংস্পর্শে লিপ্ত হলে HBV আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে রক্ত বা দেহ রসের সংস্পর্শে আসা সম্ভব।
- মায়ের থেকে শিশুর: যদি একজন গর্भवती মা HBV আক্রান্ত হন, তাহলে তিনি জন্মের সময় তাঁর শিশুকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে পারেন।
- HBV আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা দেহ রসের সংস্পর্শে আসা, যেমন:
- শরীরের তরল পদার্থের সংস্পর্শে আসা:
- HBV আক্রান্ত ব্যক্তির লালা, যোনি তরল বা বীর্যের সংস্পর্শে আসা, যেমন:
- চুম্বন: HBV আক্রান্ত ব্যক্তিকে চুম্বন করলে আপনি লালার মাধ্যমে ভাইরাসটি পেতে পারেন।
- খাবার ভাগ করে নেওয়া: যদি আপনি HBV আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে খাবার বা পানীয় ভাগ করে নেন, তাহলে আপনি লালার মাধ্যমে ভাইরাসটি পেতে পারেন।
- যৌন কার্যকলাপ: যৌন সংস্পর্শে লিপ্ত হলে HBV আক্রান্ত ব্যক্তির যোনি তরল বা বীর্যের সংস্পর্শে আসা সম্ভব।
- HBV আক্রান্ত ব্যক্তির লালা, যোনি তরল বা বীর্যের সংস্পর্শে আসা, যেমন:
হেপাটাইটিস বি-এর লক্ষণগুলি:
- অসুস্থতা:
- অসুস্থ বোধ করা, ক্লান্তি, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি
- জ্বর:
- জ্বর
- ত্বক ও চোখের হলুদ ভাব:
- ত্বক ও চোখের হলুদ ভাব (জন্ডিস)
- গাঢ় রঙের প্রস্রাব:
- গাঢ় রঙের প্রস্রাব
- পেটে ব্যথা:
- পেটে ব্যথা
আরও পড়ুনঃ প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ:
- হেপাটাইটিস বি টিকা:
- HBV প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া।
- শিশুদের জন্মের পরপরই টিকা দেওয়া শুরু করা উচিত এবং প্রাপ্তবয়স্কদেরও টিকা নেওয়া উচিত যারা ঝুঁকিতে আছেন।
- সুরক্ষিত যৌনতা:
- যৌন সংস্পর্শের সময় লেটেক্স কনডম ব্যবহার HBV ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ
হেপাটাইটিস বি একটি ভাইরাস যা যকৃতকে সংক্রমিত করে। এটি বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত বা অন্যান্য শরীরের তরলের সংস্পর্শে আসা। হেপাটাইটিস বি-এর লক্ষণগুলি কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত দেখা নাও দিতে পারে এবং এর মধ্যে রয়েছে:
- ক্লান্তি
- বমি বমি ভাব
- বমি
- পেটে ব্যথা
- গাঢ় প্রস্রাব
- ত্বক ও চোখের হলুদ ভাব (জন্ডিস)
যদি আপনি মনে করেন আপনার হেপাটাইটিস বি হতে পারে তবে পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা না করা হলে হেপাটাইটিস বি গুরুতর যকৃতের ক্ষতি এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এখানে হেপাটাইটিস বি-এর কিছু লক্ষণ রয়েছে:
জন্ডিস হল ত্বক ও চোখের হলুদ ভাব যা হেপাটাইটিস বি-এর একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি ঘটে কারণ যকৃত বিলিরুবিন সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করতে সক্ষম হয় না, একটি পদার্থ যা লাল রক্ত কণিকা ভেঙে যাওয়ার সময় উৎপন্ন হয়।
গাঢ় প্রস্রাব হেপাটাইটিস বি-এর আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। এটি ঘটে কারণ যকৃত বিলিরুবিন সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করতে সক্ষম হয় না, যা প্রস্রাবকে গাঢ় বাদামী রঙ দেয়।
পেটে ব্যথা হেপাটাইটিস বি-এর একটি লক্ষণ হতে পারে। এটি যকৃতের প্রদাহের কারণে হয়।
যদি আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ। রোগটি প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে চিকিৎসা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে করা যেতে পারে।
হেপাটাইটিস বি হলে কি বিয়ে করা যায়
হ্যাঁ, হেপাটাইটিস বি থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করা সম্ভব। তবে, আপনার এবং আপনার সঙ্গীর স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ঝুঁকি কমানোর উপায়:
- নিয়মিত পরীক্ষা করান: নিশ্চিত করুন যে আপনি এবং আপনার সঙ্গী উভয়েই নিয়মিত হেপাটাইটিস বি-এর জন্য পরীক্ষা করান। এটি ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া আটকাতে এবং সম্ভাব্য জটিলতাগুলি শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
- সুরক্ষিত যৌনতা অনুশীলন করুন: যৌন সংস্পর্শের সময় লেটেক্স কনডম ব্যবহার করা হেপাটাইটিস বি সহিত যৌনবাহিত সংক্রমণ (এসটিআই) ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ভাগ করে নিন না: টুথব্রাশ, রেজার বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ভাগ করে নেওয়া এড়িয়ে চলুন।
- আপনার সঙ্গীর সাথে আপনার সংক্রমণ সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলুন: হেপাটাইটিস বি সম্পর্কে আপনার সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা তাদের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে।
- প্রয়োজনে চিকিৎসা করান: যদি আপনার হেপাটাইটিস বি-এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার চিকিৎসা পরিকল্পনা অনুসরণ করেন। চিকিৎসা ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আপনার সঙ্গীকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
গর্ভাবস্থা:
আপনি যদি হেপাটাইটিস বি-এর সাথে গর্भवতী হন তবে আপনার সন্তানকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে প্রসবের সময় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ গ্রহণ এবং আপনার শিশুকে জন্মের পরপরই হেপাটাইটিস বি টিকা দেওয়া।
মনে রাখবেন:
- হেপাটাইটিস বি একটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং সতর্কতার সাথে, আপনি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারেন এবং একটি সুখী সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন।
- আপনার যদি হেপাটাইটিস বি নিয়ে কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনাকে আরও তথ্য এবং সমর্থন প্রদান করতে পারে।
হেপাটাইটিস বি কি ভাল হয়
হেপাটাইটিস বি ভালো হতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর, যার মধ্যে রয়েছে:
- সংক্রমণের ধরন:
- অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি: অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক (প্রায় 90%) অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি থেকে নিজেদের সেরে উঠতে পারেন। এর মানে হল তাদের শরীর ভাইরাসটি দূর করতে সক্ষম হবে এবং তাদের আর দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা হবে না।
- ক্রনিক হেপাটাইটিস বি: শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে, অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-তে পরিণত হয়। এর মানে হল ভাইরাসটি তাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদীভাবে বসবাস করবে এবং যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি যকৃতের ক্ষতি এবং জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- বয়স:
- শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
- ইমিউন সিস্টেম:
- শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমযুক্ত ব্যক্তিরা ভাইরাসটি দূর করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
চিকিৎসা:
- অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি: অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি-এর জন্য কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে বিশ্রাম, তরল পান এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে লক্ষণগুলি উপশম করা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ওষুধ দেওয়া যেতে পারে বমি বমি ভাব এবং বমি উপশম করতে।
- ক্রনিক হেপাটাইটিস বি: ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-এর জন্য বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা পাওয়া যায় যা ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং যকৃতের ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই চিকিৎসাগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, যা ভাইরাসের বৃদ্ধি থামাতে পারে।
প্রতিরোধ:
হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হল হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া। টিকাটি শিশুদের জন্মের পরপরই এবং প্রাপ্তবয়স্কদের যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের দেওয়া উচিত।
যদি আপনার হেপাটাইটিস বি হয় তবে আপনার নিয়মিত ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত যাতে আপনার অবস্থার পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং আপনি যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করা যায়।
হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়
হেপাটাইটিস বি হল একটি ভাইরাস যা যকৃতকে সংক্রমিত করে। এটি রক্ত, লালা, যোনি তরল এবং বীর্য সহ শরীরের বিভিন্ন তরল পদার্থের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হেপাটাইটিস বি-এর লক্ষণগুলি কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত দেখা নাও দিতে পারে এবং এর মধ্যে রয়েছে:
- ক্লান্তি
- বমি বমি ভাব
- বমি
- পেটে ব্যথা
- গাঢ় প্রস্রাব
- ত্বক ও চোখের হলুদ ভাব (জন্ডিস)
যদি আপনি মনে করেন আপনার হেপাটাইটিস বি হতে পারে তবে পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা না করা হলে হেপাটাইটিস বি গুরুতর যকৃতের ক্ষতি এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হল হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া। টিকাটি শিশুদের জন্মের পরপরই এবং প্রাপ্তবয়স্কদের যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের দেওয়া উচিত।
আপনি যদি হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ হন তবে এটি নেতিবাচক রাখতে আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে:
- সুরক্ষিত যৌনতা অনুশীলন করা: যৌন সংস্পর্শের সময় লেটেক্স কনডম ব্যবহার করা হেপাটাইটিস বি ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- সুঁচ ভাগ করে না নেওয়া: কখনোই অন্যের সাথে সুঁচ বা ছুরি ভাগ করে নিন না।
- ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ভাগ করে না নেওয়া: টুথব্রাশ, রেজার বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ভাগ করে নেওয়া এড়িয়ে চলুন।
- সংক্রমিত ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানো: যদি আপনি জানেন যে কারও হেপাটাইটিস বি আছে, তাদের সাথে খাবার বা পানীয় ভাগ করে নেওয়া বা তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
আপনি যদি হেপাটাইটিস বি-এর ঝুঁকিতে থাকেন বলে মনে করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনাকে পরীক্ষা করতে পারে এবং আপনাকে সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করার জন্য পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ৩ দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায়
আজকের এই তথ্যটি যদি আপনদের ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Pingback: বার বার জ্বর আসার কারণ | অবশ্যই এ কারণগুলো আপনার জানা উচিত
Pingback: লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় | কয়েকটি কার্যকারী তথ্য